চুলের যত্ন কিভাবে নিতে হয়? চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়
চুল মানুষের মাথার এক অপূর্ব সৌন্দর্য এবং অমূল্য সম্পদ। সুন্দর, ঘন, কালো ও লম্বা চুল কে না চায়। আমরা যখনই কোনো মডেল বা সিনেমার রাজকন্যাকে দেখি তখন তাদের অপরূপ চুল দেখে তা থেকে দৃষ্টি সরানো কষ্টকর হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান আবহাওয়ার যে অবস্থা তাতে চুলকে সুস্থ রাখতে পারাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুলকে সুস্থ, ঘন, কালো ও উজ্জ্বল রাখতে অবশ্যই চুলের যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত চুলের যত্ন না নিলে চুল পড়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব না। চুলের যত্ন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন যে চুলের সঠিক যত্নের সাথে স্বাস্থ্যকর চুলের স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হতে পারে।
চুলের যত্ন যেভাবে নিবেন
আপনি কি মাসে একবার বা দু’বার খান বা মাসে একবার বা দু’বার গোসল করেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশ্ন শুনে অবাক হয়েছেন। আপনি ভাবতেছেন চুলের যত্ন নেওয়ার কথা বলতে এখানে খাওয়া এবং গোসলের প্রশ্ন উঠেছে। আসলে আমি এখানে বলতে চাই সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে যেমন প্রতিদিন নানা রকম পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনি চুলের যত্ন আমরা প্রতিদিন নেই না কেনো? আমাদের যেমন খাদ্যের প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনি চুলেরও যত্নের প্রয়োজন হয়।
আমরা প্রতিদিনের কর্ম ব্যস্ততায় ঠিকমতো চুলের নেওয়ার কথা ভুলেই যাই। অথচ আমাদের চুল যখন ঝরে যায়, চুল রুক্ষ্ম হয়ে যায় এবং মাথায় টাক ধরে তখন আমরা তার প্রতি জ্ঞানের প্রকাশ ঘটে। এজন্য গ্রামাঞ্চলে একটা কথা ‘দাঁত থাকতে দাঁতের কর্ম বুঝে না’। তাই আমরা প্রতিদিন চলের যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করবো। আমরা যদি চুলের যত্ন ঠিক মতো নিতে পারি তাহলেই আমাদের চুল ঘন, কালো, মজবুত এবং লম্বা হবে। তবে চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য আপনাকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হবে না। শুধু সকাল-সন্ধ্যা একটু রুটিন মেনে চুলের যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করুন।
চুলের যত্নে আমলকি
আদিকাল থেকেই আমাদের চুলের যত্নের জন্য একটি প্রধান উপাদান হিসেবে আমলকি ব্যবহার করা হয়ে আসতেছে। চুলের যাবতীয় সমস্যা মিটিয়ে চুলকে উজ্জ্বল ও সুন্দর করতে আমলকির জুড়ি নেই। চুলের উজ্জ্বলতা এবং সুন্দর করার পাশাপাশি চুল পড়া, নতুন চুল গজানো, খুশকি সমস্যা, মাথার ত্বক পরিষ্কার করা সহ নানা সমস্যা দূর করতে আমলকি বেশ কার্যকারী।
আমলকির রস, শিকাকাই, নারিকেল তেল এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার পুরো চুলে ভালো ভাবে মেখে ২৫ মিনিট রেখে তারপর শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এর ফলে চুল নরম হবে, খুশকি কমে যাবে এবং চুল ঝলমলে হয়ে উঠবে।
চুলের যত্নে মেথি ও লেবুর রস
লেবুর রয়েছে অনেক গুণ। লেবুতে ভিটামিন-সি রয়েছে। ভিটামিন-সি এর উৎস ফলটি যেমন শরীরকে সুস্থ রাখে ঠিক তেমনি ত্বক ও চুলের যত্নেও এর ভূমিকা অপরিসীম। লেবুর রস হেয়ার প্যাক হিসেবে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়। পাশাপাশি খুশকি দূর করতে এর উপকারিতা অনেক।
দেড় টেবিল চামচ মেথি ভিজিয়ে নিয়ে বেটে নিন। এর সঙ্গে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এরপর মাথার ত্বকে সুন্দর করে আধা ঘন্টা লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে সুন্দর করে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে মরা চামড়া, খুশকি দূর করতে, চুলের বৃদ্ধিতে এবং চুল পড়া কমতে সাহায্য করে থাকে।
চুলের যত্নে পেঁয়াজের ব্যবহার
আমাদের রান্নাঘরের অন্যতম পরিচিত একটি উপাদান হলো পেঁয়াজ। পেঁয়াজ শুধু খাবারকেই সুস্বাদু করে না সেই সাথে চুলের যত্নেও কাজে লাগে। চুলের পুষ্টি জোগাতে পেঁয়াজের তেল ব্যবহার করতে পারেন। চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য পেঁয়াজের রস ও তেল বিশেষভাবে পরিচিত। চুলের খুশকি দূর করতে পেঁয়াজের রসের জুড়ি নেই। এমনকি পেঁয়াজের রস মাথায় ঘষলে নতুন চুল গজায়।
পরিমাণ মতো কয়েকটি পেঁয়াজ নিয়ে থেঁতলিয়ে রস বের করে নিন। তারপর সম্পূর্ণ মাথায় তেল দেওয়ার মতো করে চুলে ও মাথার ত্বকে পেঁয়াজের রস মাখিয়ে নিন। ঘন্টা খানেক রেখে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। চুল শুকানোর পরে দেখবেন রেশমের মতো ফুরফুরে হয়ে উঠেছে। চুলের গোড়া শক্ত করতে ও মাথার ত্বক সুস্থ্য রাখতে এই তেল বেশ উপকারী।
প্রাকৃতিকভাবে চুল শুকান
আমরা জানি, হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকানো চুলগুলো অন-স্কিনে অনেক সুন্দর করে তোলে। তবে এটি সুন্দর করলে চুলের ক্ষতি সাধন করে থাকে। অতিরিক্ত তাপের ফলে আপনার চুলের ক্ষতি হয়। আপনার যদি স্টাইল করতেই হয় তবে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলিতে এটি সীমাবদ্ধ করুন। শ্যাম্পু করার পরে চুল বাতাসে শুকানো সবচেয়ে ভাল উপায়।
বাতাসে চুল শুকালে অনেকটা সময় লাগে। কখনোই চুল মুছতে ভেজা তোয়ালে ব্যবহার করবেন না। ভেজা তোয়ালে ব্যবহার করলে ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নেওয়ার থেকে তোয়ালে দিয়ে চুল শুকিয়ে নেওয়া ভালো। তবে তোয়ালে দিয়ে ঘষলেও আপনার চুলের ক্ষতি হতে পারে। এক্ষেত্রে সবথেকে ভালো হয় প্রাকৃতিকভাবে চুল শুকানো। চুলের প্রতি একটু যত্নবান হোন।
চুলে নিয়মিত তেল ব্যবহার
প্রতিদিন ব্যস্ত জীবন ও পরিবেশ দূষণ সবার আগে কেড়ে নিচ্ছে চুলের সৌন্দর্য। ঘন, কালো এবং সুন্দর চুল পাওয়া এখন ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই উজ্জ্বল ও ঝলমলে চুল পাওয়ার জন্য অন্যতম সেরা উপায় হল তেল দিয়ে চুল এবং মাথা ম্যাসাজ করা। নিয়মিত তেল মালিশ করার সবচেয়ে ভালো সুবিধা হল এটা মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। সারা মাথায় তেল ছড়িয়ে গেলে তা চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং চুলকে উজ্জ্বল করে থাকে। আবার নিয়মিত তেল মালিশ করার অন্যতম উপকারিতা হল এটা চুল পড়া কমানোর পাশাপাশি চুল গজাতেও সাহায্য করে থাকে। তাই আপনার চুলে নিয়মিত তেল ব্যবহার করুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার
মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের অন্যতম একটি অংশ হল চুল। স্বাস্থ্যকর সুন্দর চুল মানুষের চেহারা ফুটিয়ে তোলে। মানুষের মুখের সৌন্দর্য বাড়াতেও চুলের জুড়ি নেই। আপনার সৌন্দর্যের ৬০% নির্ভর করে থাকে এই চুলের উপর। আপনি কি জানেন এই চুল সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে পানি ও তেলের পাশাপাশি প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান। বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের কারণে চুলের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মধ্যে ডিম, বাদাম, ডাল, পালংশাক, লেবু উল্লেখযোগ্য। তাই সুন্দর চুল পেতে এবং চুলের সমস্যা কমাতে শুধু তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহার না করে একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
FAQS-
# আপনি চুলের যত্ন কিভাবে নিবেন?
=> চুল আমাদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। নিয়ম করে দিনে ২-৩ বার হেয়ার ব্রাশ করা চুলের জন্য অনেক উপকারী। চুল ভালো রাখার জন্য হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। ঘরে তৈরি প্যাক চুলের সুরক্ষায় বেশি কার্যকরী।
# কত দিন পর পর চুলে শ্যাম্পু করা উচিত?
=> খুব ঘন চুল হলে সপ্তাহে একদিন বা দুই দিন শ্যাম্পু করলেই যথেষ্ট। চুল শুষ্ক বা রুক্ষ হলে ৫-৭ দিন অন্তর চুলে শ্যাম্পু করতে পারেন। যাদের চুল সরু বা পাতলা তারা একদিন পরপর শ্যাম্পু করুন। এতে আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
# চুলে তেল লাগিয়ে কতক্ষণ রাখা উচিত?
=> বেশিরভাগই রাতে শোয়ার আগে চুলে তেল দিয়ে থাকেন এবং সকালে উঠে শ্যাম্পু করে ফেলেন। কিন্তু সারারাত চুলে তেল লাগিয়ে থাকলে তা স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেলের সঙ্গে মিশে যায় এবং চুল আরও বেশি তৈলাক্ত হয়ে ওঠে। তাই চুলে তেল লাগিয়ে এক ঘন্টা রাখুন এর বেশি নয়।
# স্বাস্থ্যকর চুল কি?
=> বিমূর্ত. একটি মসৃণ টেক্সচার এবং পরিষ্কার-কাটা প্রান্ত বা টেপারড টিপস সহ চকচকে চুল সাধারণত স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। চুলের গঠন এবং চকচকে চুলের পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যেখানে চুলের অখণ্ডতা চুলের কর্টেক্সের সাথে সম্পর্কিত।
শেষ কথা
আপনি কেমিক্যাল ফ্রি পণ্য ব্যবহার করে চুলে আপনার নিজস্ব স্টাইল নিয়ে আসতে পারেন। সুন্দর চুলের জন্য যে খুব ব্যয়বহুল লাইফস্টাইল অথবা প্রোডাক্টস ব্যবহার করতে হয় এমনটা কখনই নয়। শুধু প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা আর প্রয়োজন সঠিক পুষ্টির। তাই চুলকে সজীব ও সুন্দর রাখার জন্য অবশ্যই নিয়মিত চুলের যত্ন নিবেন। অতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক পরিমাণ চুল পড়া বা মাথার ত্বকে সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
# খুশকি কি? শীতকালে খুশকি দূর করার উপায়! # কিভাবে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারি? পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়!